এ. এস. কাঁকন, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কামারপাড়ায় বিরামহীন টুং টাং শব্দ জানান দিচ্ছে, কোরবানির ঈদ সমাগত। তাই কোরবানির পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটার সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। নতুন দা, বটি, ছুরি, চাকু ও চাপাতি কিনতে কিংবা পুরনো দা, বটি, ছুরি, চাকু ও চাপাতিতে শান দিতে অনেকে কামারপাড়ায় ভিড় জমাচ্ছেন।
তবে কোরবানির পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো আর মাংস কাটার আধুনিক সরঞ্জামাদির ব্যবহার ও অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তা কামারদের ব্যবসায় ধস নামিয়ে দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কামারদের প্রতিটি দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পশু কোরবানির সরঞ্জামাদি। প্রতিটি লোহার তৈরি ছোটো ছুরির দাম ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। বড়ো অর্থাৎ পশু জবাই করার ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। আকার ভেদে চাপাতির দাম ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। তবে দা-বটি বিক্রি হচ্ছে ওজনে। প্রতি কেজি ৮০০ টাকা।
অবশ্য এসব সরঞ্জাম সারা বছরই কিছু না কিছু বিক্রি হয়। তবে কোরবানির ঈদে বিক্রি বেড়ে যায়। এই আশায় বসে থাকেন কামাররা; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আগের মতো বেচাবিক্রি নেই। এমনকি ঈদেও আশানুরূপ ব্যবসা হয়না। লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া বিক্রয় মূল্যও বেড়ে গেছে।
ক্রেতারাও বলছেন, গতবছরের চেয়ে এবার দাম বেশি। তবুও কিনতে হচ্ছে।
এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলেও তারা জানালেন।
অন্যদিকে অনেকেই কোরবানির পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটার জন্যে আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন। আর এসব কিনছেন অভিজাত দোকান থেকে কিংবা অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে। ফলে কামাররা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ্ই বঞ্চনা কামার পরিবারগুলোর টিকে থাকার লড়াইকে ক্রমশ কঠিন করে তুলছে। বংশ পরম্পরায় ধরে রাখা পেশাকে এনে দাঁড় করিয়েছে হুমকির মুখে-খাদের কিনারে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এই কামার শিল্প এক সময় হারিয়ে যেতে পারে।