সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল/৬ বৈশাখ) দুপুরে মহানগরীর চৌহাট্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আহুত সংবাদ সম্মেলনে এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
এতে লিখিত বক্তব্যে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ জানান, তারা এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সাল অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখানে সূচারুভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে এখনো সেশনজট হয়নি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা এনায়েত হোসেন মুকুলের আশ্বাসে বেতন-ভাতা না পেয়েও তারা একটি দিনের জন্য কাজ বন্ধ রাখেননি।
তিনি জানান, তখনকার উপাচার্য তাদেরকে একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দেন। ২০২৩ সালের ১৭ জুন সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬ মাসের জন্য একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেন। এরপর ২৬ জুন শূন্য পদের বিপরীতে আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন; কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় তারা চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তৎকালীর উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করে তারা কাজে যোগ দেন।
কাজী মাসুদ আরও বলেন, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর জনরোষ থেকে বাঁচতে তৎকালীন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার লাপাত্তা হয়ে যান। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনকারী দুজনের পদত্যাগের দাবি তুললে ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেন।
তিনি জানান, প্রায় ৪ মাস পর উপাচার্য ডা এনায়েত হোসেন মুকুল ক্যাম্পাসে ফিরলে বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো নূরের জামান চৌধুরীর উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণ সহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আশ্বাসের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেট সভা ডাকেন তখনকার উপাচার্য। এ সভায় ডিন অধ্যাপক ডা নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে ইতঃপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এ অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়; কিন্তু ২০ ডিসেম্বর উপাচার্য পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে দেন। তবে ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশ সহ প্রতিবেদন জমা দেন নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা নাজমুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানান যে, ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন। তা সত্ত্বেও ২৩ মার্চ উপাচার্য ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহবান করেন; কিন্তু ডা নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না হওয়ায় প্রতিবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
সিন্ডিকেট সভার পর থেকে উপাচার্য আর কার্যালয়ে আসছেননা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তিনি সাবেক উপাচার্যের রেখে যাওয়া স্বৈরাচার-দোসরের মতাবলম্বীদের দিয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অস্থায়ী কার্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
কাজী মাসুদ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহবান করে নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্যথায় দাবি আদায়ে ব্লকেড কর্মসূচি সহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলন সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।