সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসন সিংহ বলেছেন, বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রত্যেক ঋতুর আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে; কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এখন অন্যান্য ঋতুর বৈশিষ্ট্য কমছে। এখন কেবল গ্রীষ্মকালের দেখা মেলে। অন্যদিকে শীতকাল ছোট হচ্ছে ক্রমশ। গেলো বছর তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিলো। ঠিক একইভাবে এবছরও গরম বেশি লাগছে।
তিনি হুশিয়ার করে দিয়েছেন, ‘আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা মরুভূমিকরণের দিকে এগোচ্ছি আমাদেরই সৃষ্ট কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে ছোটবেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব আশঙ্কার কথা বলা ছিলো বই পু্স্তকে, তা আজ বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ, বনভূমি ধ্বংস ও পাহাড় টিলা অবাধে কেটে উজাড় করার মাধ্যমে আমরা যেভাবে পরিবেশটা ধ্বংস করে দিচ্ছি, এর খেসারত আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে হবে।’
বুধবার (১৬ এপ্রিল/৩ বৈশাখ) দুপুরে মহানগরীর চৌহাট্টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ বাস্তবায়িত ইকরা প্রকল্প ও ইয়ুথনেট গ্লোবালের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জলবায়ু মেলা-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘জাফলং ও বিছনাকান্দির মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা যেখানেই পিকনিকে যাই সেখানে খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলে নোংরা করে আসি। আমাদের এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা প্রকৃতিকে যে কি পরিমাণ অত্যাচার করি সেটা নিজেরাও জানি না। তাই প্রকৃতিও তার প্রতিশোধ নেয়। খরা, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন ও টিলাধ্বসের মতো ঘটনা আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে। তাই আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বায়ুদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণসহ সকল প্রকার পরিবেশ দূষণ রোধে একসাথে কাজ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় বর্ষা মৌসুমে বেশি করে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। আমরা যদি পরিবেশটাকে ভালো রাখি তাহলে পরিবেশও আমাদের ভালো রাখবে।’
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও ইয়ুথনেট গ্লোবালের সদস্য হুমায়রা আহমেদ জেবার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মো শরাফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো আনিছুজ্জামান, সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো মিজানুর রহমান মিয়া এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো আব্দুল কুদ্দুস বাবুল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ইয়ুথনেট বালের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট সমন্বয়কারী নাজমুল নাহিদ। প্রকল্প পরিচিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সিলেটের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো আতিকুর রহমান।
জলবায়ু মেলার সমাপ্তি হবে আগামীাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল)। বিকেল ৩টায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো রেজা-উন-নবী।–সংবাদ বিজ্ঞপ্তি