বিশেষ প্রতিনিধি, নবীগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর এলাকায় কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত এই বালু উত্তোলনে নদীভাঙন হচ্ছে তীব্র। তাই বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন কুশিয়ারা তীরবর্তী মানুষেরা। প্রখ্যাত পরিবেশবিদ শরীফ জামিল সহ পরিবেশবাদীরা এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল/২১ চৈত্র) দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরা’র কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও ধরা’র কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী কিম, বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও ধরা’র হবিগঞ্জের সদস্য সচিব তোফাজ্জল সোহেল সহ পরিবেশবিদরা কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন।
এসময় এলাকার লোকজন জানান, ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে; কিন্তু ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনুমতি থাকার দাবি করলেও তাদের বালু উত্তোলনের পরিমাণ ও শর্ত সম্পর্কে এলাকাবাসীকে অবহিত করেনি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজে বালু দেওয়ার কথা থাকলেও ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজ বিভিন্ন পক্ষের কাছে বালু বিক্রি করছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ওয়াহিদ এন্টারপ্রাইজের নামে বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে, যা আশেপাশের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়া মা এন্টারপ্রাইজ, রনি এন্টারপ্রাইজ, রাইসা এন্টারপ্রাইজ ও আলী এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদীতে ৫-৬টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের এজেন্টরা এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলার হুমকি দেওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একদিকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে এলাকা ভাঙছে অন্যদিকে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশবিদরা। নদী খনন না করে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প অর্থ লুটপাটের মাধ্যম বলে তারা মনে করেন।
পরিদর্শন শেষে শরীফ জামিল সাংবাদিকদের জানান- রাজনৈতিক প্রভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে কুশিয়ারা নদীতে ভাঙন ত্বরান্বিত হবে। আবার ভাঙনরোধ করার নামে এখানে ব্লকের ব্যবসা চলছে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধ করতে বড় একটি প্রতিরক্ষা বাঁধের যে প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে তা মূলত প্রজেক্ট বাণিজ্য। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বালু উত্তোলন ও ব্লকের প্রজেক্ট কোনোটিই স্থানীয় লোকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে একে অপরকে সহযোগিতা করছে।
তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করবেন ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাবেন উল্লেখ করে এই পরিবেশবিদ বলেন, যদি দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা হয় তাহলে কুশিয়ারা নদী তীরের বাসিন্দাদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।