নিজস্ব প্রতিবেদক : অসুস্থ বাবা আর মা সংবাদ সম্মেলন ডেকে সন্তান আর সেই সন্তানের ঔরসজাত নাতিপুতিরা যেন তাদের ‘মরা মুখ’ দেখতে না আসে-এমন ঘোষণা দেওয়ার নজির বাঙালি সমাজে খুব একটা নেই; কিন্ত সিলেটে এমন একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। নিজের সন্তানের মানসিক যন্ত্রণাদগ্ধ ও মামলার আসামি বাবা-মা কাতরকন্ঠে সন্তানতুল্য উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ জানালেন, কেউ যেন কোনদিন জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীকে কষ্ট না দেন। সতর্ক করে দিলেন, এর পরিণতি ভাল হয়না-হবেনা।
দু’জনের চোখ দিয়ে তখন অশ্রু ঝরছিল। কাঁদতে কাঁদতেই বলছিলেন কথাগুলো। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল, শব্দগুলো উচ্চারণ করতে গিয়ে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এক পর্যায়ে কয়েক মিনিটের জন্যে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। পরিবেশটা এমনই হয়ে উঠেছিল যে, কারও মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা। নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকরাও বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
সিলেট মহানগরীর একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী কাদর। রাজনীতি সচেতন মানুষ। ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উদাহরণ টেনে এনে বললেন, সাংবাদিকরাই পারেন মানুষকে জাগাতে। আর কোন বাব-মাকে যাতে এমন নরক যন্ত্রণায় ভুগতে না হয় সে জন্যে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
শাহী ঈদগা হাজারীবাগ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হৃদরোগে কাবু মোহাম্মদ আলী কাদর অভিযোগ করেন, তার বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন সমুদয় সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে কেবল জালিয়াতির আশ্রয় নেননি তাকে গুম করার ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবদুল্লাহ আল মামুনের দায়ের করা মামলায় তার মোজা ছেলে আলী হাসান আমিন ও মেয়ে আফসানা বেগম শিমু কারাগারে আছেন। জামিনে আছেন তিনি, তার ছোট ছেলে আব্দুল মুমিন, ভাতিজা সাহেদ আলী ও গাড়িচালক কাওসার আহমদ; কিন্তু স্বস্তিতে নেই। কারণ নানা ধরনের হুমকি পাচ্ছেন।
মোহাম্মদ আলী কাদর জানান, বড়ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর পুত্রবধূ ও তার বাপের বাড়ির লোকজনের প্ররোচনায় আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের বাবা-মা ও ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার নেশায় মেতে উঠেন। হামলা চালান ভাই-বোন ও বাসার ভাড়াটেদের উপর। মায়ের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং ভয়ভীতি দেখান বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
আবদুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে মহানগরীর ফরহাদ খাঁ পুল এলাকায় বসবাস করলেও হাজারীবাগের বাসা দখলের চেষ্টা করছেন। এ উদ্দেশ্যে ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এই বাসায় হামলা চালিয়ে তার ছোট ছেলে আবদুল মুমিনকে আহত করেন বলে মোহাম্মদ আলী কাদর অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী কাদরের স্ত্রী রোকসানা বেগম, পুত্রবধূ শাহানা আক্তার, ইকরা জান্নাত মীম ও ছোট ছেলে আব্দুল মুমিন উপস্থিত ছিলেন।